রাষ্ট্রপতিকে হঠাৎ যে আহ্বান দিল আওয়ামী লীগ

অসাংবিধানিক ও অবৈধ অপশক্তির হাত থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্রপতিকে আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। বুধবার (২৩ অক্টোবর) রাতে আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খানের পাঠানো এক বিবৃতিতে এই আহ্বান করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগ মনে করে, দেশ এক গভীর সংকট ও চরম ক্লান্তিকাল অতিক্রম করছে। অসাংবিধানিক ও অবৈধ তথাকথিত অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রধান রাষ্ট্রপতিকে উৎখাত করতে চাচ্ছে। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের সব বিভাগের প্রধান। তিনি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতীক- সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। রাষ্ট্রের যেকোনো অন্তর্বর্তী সময়ে একমাত্র বিচারিক ক্ষমতা ছাড়া রাষ্ট্রপতিই শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগের সব ক্ষমতার মালিক। সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে রাষ্ট্রপতির ওপর যেকোনো আঘাত সেনাবাহিনীসহ সমগ্র সশস্ত্র বাহিনীর ওপর আঘাত হিসেবেই ধরে নেওয়া হয়।

যারা রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে অশালীন বক্তব্য দেওয়ার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে, তারা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ করছে বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।

এদের বিচার করতে হবে। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক আমাদের সশস্ত্র বাহিনী। সেই সেনাবাহিনীর ওপর হামলা করা এবং সেনাপ্রধানকে নিয়ে কটূক্তি করা সার্বভৌমত্বের প্রতি আঘাত হানার শামিল।

বিবৃতিতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি যদিও তাদের নিয়োগের কোনো সাংবিধানিক ও আইনি বৈধতা নেই। এই ধরনের পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক প্রথা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি যাদের নিয়োগ দেন, তাদের নিয়োগ তিনি বাতিল করতে পারেন।

‘উপদেষ্টারা রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নিয়েছেন এই মর্মে যে, তারা বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করবেন এবং সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তাবিধান করবেন। রাষ্ট্রপতির পদ বাংলাদেশের ঐক্য ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে কোন উপদেষ্টা বক্তব্য দেওয়ার অর্থ হচ্ছে তিনি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যের শপথ ভঙ্গ করেছেন। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টাসহ কিছু উপদেষ্টা ইতোমধ্যে তাদের শপথ ভঙ্গ করেছেন। তারা শপথ নিয়েছেন এই মর্মে যে, তারা সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তাবিধান করবেন। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করে তারা সংবিধান রক্ষার শপথ ভঙ্গ করেছেন। তাই রাষ্ট্রপতি শপথ ভঙ্গের জন্য প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টাদের অপসারণ করতে পারেন।’

সংবিধান মোতাবেক ড. ইউনূসের শপথ হয়নি উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, তার নিয়োগ সম্পূর্ণরূপে অসাংবিধানিক ও বেআইনি। সে কারণে ইউনূসের ক্ষমতায় থাকার কোনো আইনি ও নৈতিক অধিকার নেই। কাজেই ইউনুসের বিদায় নেওয়া উচিত।

‘১৫ জুলাই থেকে সারা দেশে পুলিশ হত্যাসহ ব্যাপক গণহত্যার পর মাত্র আড়াই মাসে এই অসাংবিধানিক অপশক্তি দেশকে এক বর্বর মধ্যযুগীয় রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। হত্যাকাণ্ডসহ যে অপকর্মগুলো ১৫ জুলাই থেকে তারা করেছে, সেগুলোতে দায়মুক্তি দেওয়ার ফলে এটা প্রমাণিত যে, দায়মুক্তিকালীন যা কিছু ঘটেছে সেগুলো ওরাই ঘটিয়েছে।’

দেশের মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই মন্তব্য করেছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। বলা হয়, রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান তারা ধ্বংস করেছে। বৈষম্যহীন ছাত্র আন্দোলনের নামে সমাজে বিরাট বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। দেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম এমনভাবে বেড়ে গেছে যে মানুষ একবেলা খেতে পারছে না, কাজ পাচ্ছে না, চারিদিকে ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার। পিটিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করাতেই এরা পারদর্শী। তারা অনেক মায়ের কোল খালি করেছে। তাদের বিচার এই বাংলার মাটিতেই হবে ইনশাআল্লাহ।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দেড় দশকে শেখ হাসিনা দেশকে যেভাবে একটি সাজানো বাগানের মতো গড়েছিলেন, এই বর্বর গোষ্ঠী সেই সাজানো বাগানকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। রাষ্ট্রপতিকে আহ্বান জানাবো, তিনি যেন এই অসাংবিধানিক ও অবৈধ অপশক্তির হাত থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করেন।