নব্বই দশকের শুরুতে ‘চার্মিং বউ’ অ্যালবামের ‘কী ছিলে আমার’ শিরোনামের একটি গান মনি কিশোরকে প্রতিষ্ঠিত ও ব্যাপক পরিচিত করে দেয় সংগীতাঙ্গনে। একে একে ৩০টির বেশি একক অ্যালবাম করেন। তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে ‘কী ছিলে আমার’, ‘সেই দুটি চোখ কোথায় তোমার’, ‘তুমি শুধু আমারই জন্য’, ‘মুখে বলো ভালোবাসি’, ‘আমি মরে গেলে জানি তুমি’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তার সবচেয়ে শ্রোতাপ্রিয় গান ‘কী ছিলে আমার’ তারই সুর করা ও লেখা।
ফিতার ক্যাসেটের যুগ পেরিয়ে এলো সিডি। তারপর অডিও জগতে এলো নানা পরিবর্তন। মনি কিশোর চলে গেলেন আড়ালে। কোথাও আর তার দেখা মিলতো না। সেই গায়ক নীরবেই চলে গেলেন পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে। পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, মৃত্যুর প্রায় চার-পাঁচদিন পর রামপুরার ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে মনি কিশোরের মরদেহ।
নড়াইল জেলার লক্ষ্মীপুরে মামাবাড়িতে ১৯৫৮ সালে জন্ম মনি কিশোরের। পুলিশ কর্মকর্তা বাবা অনিল কুমার মণ্ডলের ছেলে অরুণ কুমার মণ্ডল ছিলেন কিশোর কুমারের ভক্ত। ডাকনাম ছিল মনি। কিশোর কুমারের ভক্ত ছিলেন বলে নামের সঙ্গে ‘কিশোর’ জুড়ে নিয়েছিলেন।
নব্বই দশকের শুরুতে বিয়ে করেন মনি কিশোর। তখন ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম গ্রহণ করেন তিনি। এরপর মুসলিম হিসেবেই জীবন যাপন করেছেন। দেড় যুগ আগে স্ত্রীর সঙ্গে তার দাম্পত্যজীবনের ইতি ঘটে। রামপুরায় একটি ভাড়া বাসায় একাই থাকতেন তিনি। তার একমাত্র মেয়ে নিনিন্তি যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে শোকে কাতর মেয়ে।
সেখান থেকে তার পরিবারকে তিনি জানিয়েছেন বাবার শেষ ইচ্ছের কথা। মনি কিশোর একমাত্র মেয়েকে বলে গেছেন তার মৃত্যুর পর যেন ইসলাম ধর্মমতে তাকে দাফন করা হয়। মনি কিশোরের ভাই অশোক কুমার গণমাধ্যমে বলেন, ‘নিনিন্তি জানিয়েছে তার বাবাকে যেন দাফন করা হয়। এমনটাই নাকি ওর বাবা ওকে বলে গিয়েছিল। মেয়েকে যেহেতু বলে গিয়েছে, তাই তার ইচ্ছামতো দাফনের কাজটাই করা হবে।’
তিনি আরও জানান, আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাছে মনি কিশোরের মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। এরপর ওরাই সিদ্ধান্ত নেবে, কোথায় মরদেহ দাফন করা হবে। তবে নিনিন্তি অনুরোধ করেছে তার বাবাকে যেখানেই কবর দেওয়া হোক, সেখানে যেন একটা চিহ্ন রাখা হয়। সে যেন বাবার কবরটা খুঁজে পায়।
শেষজীবনে মনি কিশোর নানা রোগে ভুগছিলেন। হার্টের সমস্যা যেমন ছিল, তেমনি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্টের সমস্যায়ও কাবু ছিলেন এই গায়ক। গত কয়েক মাস ধরে সমস্যাগুলো আরও বেড়েছিল।